ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু জ্বর কি? | ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত রোগ
জ্বর একটি এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। উপসর্গ জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি।
ডেঙ্গু জ্বর : একটি এডিস মশা বাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস জনিত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ।এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের তিন থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সচরাচর ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা দেয়। উপসর্গগুলির মাঝে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশিতে ও গাঁটে ব্যথা এবং গাত্রচর্মে ফুসকুড়ি। দুই থেকে সাত দিনের মাঝে সাধারণত ডেঙ্গু রোগী আরোগ্য লাভ করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগটি মারাত্মক রক্তক্ষরী রূপ নিতে পারে যাকে ডেঙ্গু রক্তক্ষরী জ্বর (ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার) বলা হয়। এর ফলে রক্তপাত হয়, রক্ত অনুচক্রিকার মাত্রা কমে যায় এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ ঘটে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কখনোবা ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দেয়। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে যায়।
ডেঙ্গু রোগের জীবাণুর নাম কি ?
ডেঙ্গু ভাইরাস বা ডেঙ্গি ভাইরাস(ইংরেজি: Dengue virus) (DENV) হলো ফ্ল্যাভিভাইরিডি পরিবার ও ফ্ল্যাভিভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত মশা বাহিত এক সূত্রক আরএনএ(RNA) ভাইরাস। এটি ডেঙ্গু জ্বরের জন্য দায়ী। এই ভাইরাসের পাঁচটি সেরোটাইপ পাওয়া গিয়েছে। যাদের প্রত্যেকেই পূর্ণরূপে রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম।এডিস ইজিপ্টি মশা(A. aegypti) এই ভাইরাসের বাহক। একই মশা ইয়েলো ফিভার ভাইরাস, জিকা ভাইরাস, চিকুনগুনিয়া ভাইরাসেরও বাহক।
ডেঙ্গু মশা চেনার উপায়
চারদিকে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ। মশা একটু কামড়ালে অনেকেই মনে করেন ডেঙ্গু মশার কামড়। কিন্তু সব মশাই ডেঙ্গু নয়। ডেঙ্গুর মশা দেখতে অন্য মশার থেকে একটু আলাদা, এডিস মশা দেখতে আলাদা। কারণ তাদের শরীরে ও পায়ে সাদা কালো দাগ রয়েছে। অন্যান্য মশার মত নয়, এডিস মশা সক্রিয় থাকে এবং শুধুমাত্র দিনের বেলায় কামড়ায়। সর্বোচ্চ কামড়ের সময়কাল সকালের প্রথম দিকে এবং সন্ধ্যা ও সন্ধ্যার আগে।
ডেঙ্গু মশার কামড়ে সাধারণত ব্যথা হয় না বা চুলকায় না। যখন অন্যান্য মশা কোথাও বসে, তারা ৪৫ ডিগ্রি কোণে বসে; কিন্তু ডেঙ্গুর মশা সমান্তরালে বসে। এই ভাবে আপনারা ডেঙ্গু মশা চিনতে পারবেন
ডেঙ্গু মশা কখন কামড়ায়
ডেঙ্গু ভাইরাসের বাহক এডিস ইজিপ্টাই জাতের মশা। ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশার কামড়ের মাধ্যমে একজনের শরীর থেকে অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে এই মশা কখন কামড়ায় তা নিয়ে অনেকেরই ভিন্ন মত রয়েছে। এতদিন একটা ধারণা ছিল যে মশা মূলত দিনের বেলায় কামড়ায়, ডেঙ্গু মশা কখন কামড়ায় সময়কাল সকালের প্রথম দিকে এবং সন্ধ্যা ও সন্ধ্যার আগে।
ডেঙ্গু মশার উৎপত্তি | ডেঙ্গু মশা কোথায় জন্মায়
একটি প্রাপ্তবয়স্ক মশা যে কোনও স্থায়ী জলে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। ডেঙ্গু মশার জন্য আদর্শ প্রজনন স্থানগুলির উপর সাম্প্রতিক একটি গবেষণা করা হয়েছে , ডেঙ্গু মশারা যেখানে বংশ বৃদ্ধি করে যেমন টায়ার, ব্যারেল, প্লাস্টিকের ড্রাম এবং জেরি ক্যানে ইত্যাদি। এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য আদর্শ অন্যান্য অনেক ইনডোর এবং আউটডোর সাইট রয়েছে।
যেগুলো উল্লেখ যোগ্য জায়গা যেখানে মশা বংশ বৃদ্ধি করে থাকে নিচে দেওয়া হলো
১। ফ্রিজের ট্রে
২। রান্নাঘরের র্যাক – যেখানে ধোয়া বাসনপত্র রাখা হয়
৩। জল জমে থাকা রান্নাঘরের-বাথরুমের ড্রেন
৪। কুলার
৫। বাথরুম-সিস্টার্নে থাকা লিকেজ
৬। আঢাকা বালতি-জলের পাত্র, যেগুলি সবসময় ব্যবহার করা হয় না
৭। গৃহ সাজানোর ফুলের টব-জল সহ সাজানোর জিনিষ
৮। বনসাই প্ল্যান্ট-ইনডোর প্ল্যান্ট
ডেঙ্গু মশার প্রতিরোধের তালিকা
ডেঙ্গু জ্বর মূলত মশার কামড় এবং ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের কারণে হয়। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। ডেঙ্গু বহনকারী এডিস মশা কামড়ানোর চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে একজন ব্যক্তি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায় জানা সবার জন্য খুবই জরুরি। নিচের নির্দেশ গুলো সবাই মেনেচল্লে ইনশাআল্লা ডেঙ্গু থেকে নিরাপদ থাকতে পারবো।
১। ডেঙ্গু মশার বাসস্থান কমাতে হবে
২। সময়মতো বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ রাখুন
৩। ডেঙ্গু মশা নিধনের ব্যবস্থা করা।
৪। প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরিধান করা।
৫। ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করা।
৬। কোথাও পানি জমতে না দেওয়া।
৭। ঘর সবসময় আলো বাতাসপূর্ণ রাখা।
ডেঙ্গু জ্বর কি ছোঁয়াচে রোগ | ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে
ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত তিন থেকে ছয় দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য মশারির ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ, যাতে করে অসুস্থ ব্যক্তিকে মশা কামড়ে আবার সুস্থ কাউকে কামড়াতে না পারে। ডেঙ্গু ছোঁয়াচে রোগ নয় বা এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তিকে সংক্রমিত করে না। তবে ডেঙ্গু রক্তসম্বন্ধীয় সামগ্রী ও অঙ্গদানের মাধ্যমেও পরিবাহিত হতে পারে।
ডেঙ্গু হলে কোন খাবার খাওয়া যাবে না
ডেঙ্গু হলে কোন খাবার খাওয়া যাবে
ডেঙ্গু জ্বরের সময় প্লাটিলেটের সংখ্যা ও হিমোগ্লোবিন কমে যায়। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে এবং প্লাটিলেট তৈরি করতে শরীরের প্রচুর আয়রনের প্রয়োজন। কলিজা, ডিম, ডালিম, মিষ্টিকুমড়ার বিচি, বিট জুস, খেজুর, কিশমিশ, জলপাই, সবুজ শাকসবজি প্লাটিলেট ও হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে।
পোস্টটি যদি ভালো লাগে অবশ্য আপনার পরিবার ও বন্ধুদের কে সচেতন করতে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। নিচে বাটন আছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন