পবিত্র মাহে রমজানের ফজিলত ও তাৎপর্য
রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের দান নিয়ে আবার এসেছে পবিত্র রমজান মাস। আগামী ২৩ তারিখ থেকে রমজান মাস শুরু হবে। খোশ আমদেদ মাহে রমজান হল আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের সর্বোত্তম সময়। রমজান মাস
রমজান মাস। এটি আরবি মাসগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বরকতময় ও মর্যাদাপূর্ণ মাস। এ মাসের গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য অপরিসীম। আল্লাহর এই অনুগ্রহএর পৃথিবীর কোনো সম্পদের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। রমজানের আগমনে বিশ্বনবি অনেক আনন্দিত হতেন। নবি করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের উদ্দেশ্যে ঘোষণা করতেন: أتاكم رمضان شهر مبارك
রমজানের হাদীস
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ ﴿۱۸۳﴾ۙ
ইয়াআইয়ুহাল্লাযীনা আ-মানূ কুতিবা ‘আলাইকুমসসিয়া-মু কামা-কুতিবা ‘আলাল্লাযীনা মিন কাবলিকুম লা‘আল্লাকুম তাত্তাকূন। (বাকারা ১৮৩)
হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমাদের পূর্ববতী লোকদের ন্যায় তোমাদের উপরও সিয়ামকে অপরিহার্য কর্তব্য রূপে নির্ধারণ করা হল যেন তোমরা সংযমশীল হতে পারো।
“হে মু’মিনগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে। যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর। যাতে করে তোমরা তাকওয়া ও পরহেজগারী অর্জন করতে পারো।” (সূরা বাক্বারা, আয়াত : ১৮৩)
রমজানের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস
পবিত্র রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কিছু হাদীস আপনাদের জন্য উল্লেখ করা হলঃ
প্রিয় বিশ্বনবী হযরত (সা.) এর প্রিয় সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, প্রিয় নবী হযরত (সা.) এরশাদ করেছেন যে, যখন রমজান মাস আসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারী, মুসলিম)
অপর হাদিসে এসেছে, হযরত সাহ্ল ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। এই দরজাটি শুধু মাত্র রোজাদার ব্যক্তি ব্যতিত কেউ ওই দরজা দিয়ে বেহেশতের প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারী, মুসলিম)
প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) আরো বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের নিয়তে রমজানের রাতে ইবাদত করবে তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) আবারো বলেন যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সওয়াবের নিয়তে ইবাদত-বন্দেগী করে কদরের রাত কাটাবে, তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারী, মুসলিম)
এছাড়াও হাদিসে আরও এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, রোজা সম্পর্কে আল্লাহ নিজেই বলেছেন: "রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর পুরস্কার দেব।" রোজা হল ঢাল (জাহান্নামের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য)। রোজা অবস্থায় তোমাদের কেউ যেন অশ্লীল কথাবার্তা ও ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত না হয়। কেউ তার সাথে ঝগড়া করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে অপর একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে রাসুল পাক সাঃ বলেছেন যে, রোজা এবং কুরআন বান্দার জন্য আল্লাহর কাছে কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। রোজা বলবে হে পরওয়ারদিগার আমি তাকে রমজানের দিনে প্রবৃত্তি ও পানাহার থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আপনি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। আর কুরআন বলবে যে রাতের বেলা নিদ্রা হতে আমি তাকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। অতঃপর কুরআন এবং রোজা উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে এবং বান্দাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। (বায়হাকী)
হাদিস শরিফে আরও বর্ণিত আছে,যে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন রমজানের প্রথম রাত আসে তখন শয়তান ও অবাধ্য জিনকে শৃঙ্খলিত করা হয়। জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় । এবং জাহান্নামের কোনো দরজাই খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। এ মাসে একজন আহবানকারী ডাকে, হে কল্যাণের সন্ধানকারী! হে মন্দের সন্ধানকারী! আল্লাহ তায়ালা এই মাসে অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। এবং আর এটা এ মাসের প্রতি রাতেই হয়ে থাকে। (তিরমিযী ও ইবনে মাজাহ)
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, যখন রমজান মাস আসত, তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) সমস্ত বন্দীদের মুক্তি দিতেন এবং প্রত্যেক প্রার্থনা কারীকে দান করতেন। (বায়হাকী)
شَہۡرُ رَمَضَانَ الَّذِیۡۤ اُنۡزِلَ فِیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ ہُدًی لِّلنَّاسِ وَ بَیِّنٰتٍ مِّنَ الۡہُدٰی وَ الۡفُرۡقَانِ ۚ فَمَنۡ شَہِدَ مِنۡکُمُ الشَّہۡرَ فَلۡیَصُمۡہُ ؕ وَ مَنۡ کَانَ مَرِیۡضًا اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ فَعِدَّۃٌ مِّنۡ اَیَّامٍ اُخَرَ ؕ یُرِیۡدُ اللّٰہُ بِکُمُ الۡیُسۡرَ وَ لَا یُرِیۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ ۫ وَ لِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّۃَ وَ لِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۱۸۵﴾
শাহরু রামাদা-নাল্লাযীউনঝিলা ফীহিল কুরআ-নু হুদাল লিন্না-ছি ওয়া বাইয়িনা-তিম মিনাল হুদা-ওয়াল ফুরকা-নি ফামান শাহিদা মিনকুমুশশাহরা ফালইয়াসুমহু ওয়া মান কা-না মারীদান আও ‘আলা-ছাফারিন ফা‘ইদ্দাতুম মিন আইয়া-মিন উখারা-ইউরীদুল্লা-হু বিকুমুল ইউছরা ওয়ালা-ইউরীদুবিকুমুল ‘উছরা ওয়ালিতুকমিলুল ‘ইদ্দাতা ওয়া লিতুকাব্বিরুল্লা-হা ‘আলা-মা-হাদা-কুম ওয়া লা‘আল্লাকুম তাশকরূন।
রামাযান মাস, যে মাসে বিশ্বমানবের জন্য পথ প্রদর্শন এবং সু-পথের উজ্জ্বল নিদর্শন এবং হক ও বাতিলের প্রভেদকারী কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সেই মাসে (নিজ আবাসে) উপস্থিত থাকে সে যেন সিয়াম পালন করে এবং যে ব্যক্তি পীড়িত অথবা প্রবাসী, তার জন্য অপর কোন দিন হতে গণনা করবে; তোমাদের পক্ষে যা সহজসাধ্য আল্লাহ তা’ই ইচ্ছা করেন ও তোমাদের পক্ষে যা দুঃসাধ্য তা ইচ্ছা করেননা এবং যেন তোমরা নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করে নিতে পার এবং তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন তজ্জন্য তোমরা আল্লাহকে মহিমান্বিত কর এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।
“রমজান মাস এমন এক মাস, এ মাসেই কোরআন নাজিল হয়েছে, যা সমগ্র মানবজাতির জন্যে দিশারী, সত্যপথের স্পষ্ট পথনির্দেশকারী এবং সত্য-মিথ্যার পার্থক্য নিরুপণকারী।” (সূরা বাক্বারা, আয়াত : ১৮৫)
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন