আপনাদের মনে আছে কি আই রোবট বা টার্মিনেটর চলচ্চিত্রের কথা ? যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পরিচালিত যন্ত্রদের কাছে মানুষ কতটা অসহায়। আমরা এই চলচ্চিত্র তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনেক গুলো ভয়ংকর দিক দেখতে পাই। দিন দিন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের প্রতিদিনের বিভিন্ন কাজের বিভিন্ন অংশ হয়ে যাচ্ছে । চলুন আমরা সবাই কিছু নমুনা দেখে নেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার।
১৯৯৭ সালে খ্যাতিমান গ্যারি কাস্পরাভ কে দাবা খেলায় হারিয়ে দিয়েছিল আই বি এম এর তৈরী কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ডিপ ব্লু ।
গুগলের আলফাগো গো খেলায় ২০১০ সালে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের কে ৪ বার হারিয়ে দেয় ৫ বারের মধ্যে ।
এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব আমাদের দৈনন্দিন জীবনে উজ্জ্বল কোন ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করবে নাকি বয়ে আনবে ভয়াবহ কিছু সে বিষয়েই আমার আজকের এই পোস্ট।
বিজ্ঞনা সম্পকে আর ও জানতে এখানে ক্লিক করুন
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আসলে কী?
মানুষ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারে তাঁর চারপাশের পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিচার বিশ্লেষণ করসের। এবং তার পাশাপাশি মানুষ বিভিন্ন জটিল বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ঠিক একই ভাবে যখন কোন যন্ত্র মানুষের মত বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে এবং সেই সাথে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তখন তাকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয় । এটিকে কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে যেখানে কম্পিউটারকে মানুষের মত চিন্তা করতে শেখানো হয়। কারন বর্তমানে এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে ।
ইতিহাস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার
“রুশম’স ইউনিভার্সেল ১৯২০ সালের দিকে সর্বপ্রথম রোবটস” নামে একটি সায়েন্স ফিকশান থেকে সর্বপ্রথম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। অনেক বিজ্ঞানী পরবর্তীতে এই বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের সম্মেলনে আলোচনা ও বক্তব্য প্রদান করেন। বিজ্ঞানীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে । তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষনাই নতুন মাত্রা পায় কম্পিউটার আবিষ্কারের পরে ।
ভবিষ্যৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার
বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে উন্নত করার কাজ চলছে প্রায় ষাট বছরের বেশি সময় ধরে। আর এরই ধারাবাহিকতাই সেই উন্নতি আমাদের কাছে গত কয়েক বছরে আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করেছে। আর সেই উন্নতিরই নমুনা মাত্র হল সোফিয়া। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গুলো মানুষের মতোই নিজেরাই নিজেদের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারে আর তারা সেই লক্ষ্যে সফল হওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থাও নিজেরাই নিতে পারে। ক্রমাগত তারা অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গুলো আমাদের চেহারাসহ যে কোনো জটিল ইমেজ চিনতে পারে, বিশ্লেষণ করতে পারে, এবং বুঝতে পারে । যতই নিখুঁত কাজ বা সূক্ষ্ম কাজ হোক না কেন এবং, যতই পরিশ্রমের কাজ হোক বা বুদ্ধির কাজ হোক, সব রকম কাজকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে করানোর চেষ্টা চলছে । এবং এরা প্রায় সকল কাজই সফলতার সাথে করছে ।
আরো স্বচ্ছ হবে চাকরি নিয়োগ প্রক্রিয়া
বর্তমান সময়ে অনেক নামকরা প্রতিষ্ঠান তাদের কর্মী নিয়োগ করে থাকেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে । প্রায় ৫০০ নামকরা প্রতিষ্ঠান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিচ্ছে তাদের কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে,এটা যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক পত্রিকা ফরচুনের তথ্য । আর এই প্রক্রিয়ায় ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রার্থীকে সাক্ষাৎকার দিতে হয়। সেই ভিডিও কল থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রার্থী সম্পর্কে বিভিন্ন ইনফরমেশন সংগ্রহ করে ।আর এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আপনার সকল ধরনের অনুভূতি সম্পর্কে ধারনা দিতে পারবে ।কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আপনার কথা শুনে বলে দিতে পারে যে আপনি কোন কাজে আসলেই দক্ষ কিনা অথবা, আপনি কি আসলেই আপনার নিজের সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিচ্ছেন কিনা। আপনি সাক্ষাৎকারের সময় ভীত ছিলেন কিনা বা আপনি আত্মবিশ্বাসী কিনা। আর এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রার্থী সম্পর্কে সব ধারনা পেয়ে যায় এবং এভাবেই তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া অনেক বেশি দ্রুত এবং স্বচ্ছ হয়।
প্রাইভেসি বলতে কোন কিছু থাকবে না
আপনি যেকোন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে যেমন , টুইটার, ইন্সাগ্রাম কিংবা ফেসবুকে যে ধরনের তথ্য শেয়ার করেন বা আপনি যে ধরনের তথ্য খুঁজে থাকে্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এই ্সমস্থ কিছুর উপর ভিত্তি করে আপনার খারাপ লাগা, আপনার চাহিদা, আপনার ভালো লাগা, সম্পর্কে একটি ধারনা করতে পারে। আর একই সাথে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আপনার সকল তথ্য সংরক্ষণ করতে পারে, যেন পরবতীতে সে এটা যেকোন কাজে ব্যবহার করতে পারে।আর এ কারনেই আপনার নিজের গোপনীয় তথ্য বলতে কিছুই থাকেনা। যদিও আপনার কাছে মনে হতে পারে যে তথ্যটি গোপন আছে । কিন্তু ইতোমধ্যে আপনার শেয়ার করা তথ্য নিজের কোন না কোন ডেটাবেসে সংরক্ষন করে রেখেছে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ।
বোনাস আপনার জন্যঃ পৃথিবীর সামনে গ্রহের সন্ধান
সাম্প্রতি সময়ে আমরা ফেসবুকে #10yearschallenge নামে যে নতুন Trend দেখি এর মাধ্যমে কিন্তু আপনি আপনার নিজের তথ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে দিয়ে সহায়তা করেন। এবং একই সাথে আপনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে এটা বুঝতেও সাহায্য করেন যে আপনি বর্তমান সময়ে দেখতে কেমন এবং ১০ বছর পূর্বে দেখতে কেমন ছিলেন । আর এর উপর ভিত্তি করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আপনার ১০ বছর পরের ছবিও তৈরি করে নিতে পারে। যার ফলে নষ্ট হচ্ছে আপনার প্রাইভেসি।আর এটা আরো বাড়বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নতির সাথে সাথে ।
প্রচুর পরিমানে কাজ হারাবে মানুষ
মানুষের অপছন্দের গতানুগতিক কাজের দীর্ঘ সময়কে বুদ্ধিমান মেশিনের কারণে কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে অনেকে মনে করেন । কিন্তু কোন বিজ্ঞানীই এই যুক্তির সাথে একমত হননি।আর এর কারণ হল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কাছে অনেক মানুষ কাজ হারাবে। আর এর ফলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় ভয়াবহ রকম দেখা দেবে। সব কাজ চলে যাবে। কিছু কাজ শুধু মানুষের হাতে থাকবে যেমন মাঠপর্যায়ে মানুষের সঙ্গে আন্তরিক মেলামেশা করতে হয় এমন কিছু কাজ, উচ্চতম স্তরে সিদ্ধান্ত প্রণয়নকারীর কাজ এবং সীমিত কিছু উন্নয়নের কাজ । অনেক ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দখলে কাজ চলে যাওয়া শুরুও হয়েছে। এর মধ্যে বেশি ঝুঁকিতে আছে বাণিজ্যিক কাজ, পেশাগত কাজ এবং যাবতীয় কারখানার কাজ । অনেক রকম তথ্য যাচাই বাছাই করে দেখা গেছে যে অনেক কাজই তাদের হাতে চলে গেছে যেমন , গবেষণা, ব্যবসার কৌশল ও পরিচালনা, আইনি কাজ কোন কিছুই বাদ যাবে না তাদের হাত থেকে। শিল্প নির্ভর এবং সৃষ্টিশীলন কাজগুলো যেমন চারু ও কারুশিল্প, স্থাপত্য, সংগীত, সাহিত্য, ইত্যাদির ঝুঁকি ঠিক তার পরের অবস্থানেই রয়েছে।
আপনারা তাহলে এবার চিন্তা করে দেখুন আমাদের দেশের কি অবস্থা হবে। আর তার কারন হল আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ পোশাক শ্রমিক তাদের কাজ হারাবে। আর এর কারনেই আমাদের দেশের বেকার সমস্যা প্রবল আকার ধারন করবে।
মানুষের অস্তিত্ব সংকট বাড়বে
যখন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ হবে তখন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার সাথে মানুষের পাল্লা দিয়ে বুদ্ধি বা জ্ঞান চর্চা করা সম্ভব হবেনা।আর এর কারনে হানাহানিসাথে মানুষের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন রকমের সংঘাত সৃষ্টি হবে।আর এই এবং সংঘর্ষ ও হানাহানি বেড়েই যাবে। যার দরুন হানাহানি সাথে সংঘর্ষ বা যুদ্ধ করে আমাদের টিকে থাকা হবে ্দায় হয়ে পরবে। তখন আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে । কিংবা এমন হতে পারে অদূর ভবিষ্যতে আমরা আমাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়ব । আর বড় বড় বিজ্ঞানীরা যেমন -বিজ্ঞানী ম্যাক্স ট্যাগমার্ক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিজ্ঞানী অধ্যাপক নিক বোস্ট্রম,মার্টিন রিজ, এলোন মাস্ক, এবং স্টিফেন হকিংস এই সব বড় বড় বিজ্ঞানীরা বুঝতে পেরেছেন যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের জন্য অনেক বেশি হুমকির । আর তাই এমআইটির মহাবিশ্ব এই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে গবেষনা ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরো আমাদের কে অনেক বেশি সচেতন হতে বলেছেন।
এখন আমি একটা সাম্প্রতিককালের উদাহরন দিয়ে শেষ করব, অনেক ধরনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে থাকেন ফেসবুক। কিন্তু ফেসবুকের ইঞ্জিয়াররা সাম্প্রতিক সময়ে আবিষ্কার করেন যে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গুলো তাদের নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করার জন্য তারা এক ধরনের ভাষা বানিয়েছে এবং এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গুলো সেই ভাষায় নিজেদের মধ্যে যোগাযোগও করছে। কিন্তু এই আজব ব্যপার হল এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গুলোকে অন্য কোন ভাষা শেখানো হয় না ইংরেজি ছাড়া । আর এই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা গুলো নতুন ভাষা একেবারে আমাদের আমাদের সকলের অজানা। এজন্য পরবর্তীতে এই সকল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ফেসবুকের ইঞ্জিয়াররা ।
এ থেকে আমরা বুঝতেই পারছি যে, আমরা যদি এখন থেকেই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা বা ব্যবহারে অনেক বেশি সচেতন না হই তাহলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অদূর ভবিষ্যতে আমাদের জন্য অনেক বেশি হুমকির কারন হয়ে দাঁড়াবে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রকারভেদ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বৈশিষ্ট্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যাখ্যা কর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারিক ক্ষেত্র, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইতিহাস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সুবিধা অসুবিধা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইতিবাচক ব্যবহার,
benst
উত্তরমুছুনBest information men
উত্তরমুছুনএকটি মন্তব্য পোস্ট করুন